নীলফামারীর সৈয়দপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খালিশা বেলপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারটি পদে প্রায় অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ও গভর্নিং বডির সভাপতি এরশাদ আলী লেবুর যোগসাজশে গত মঙ্গলবার সম্পন্ন হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া।
নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থীদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে লোক দেখানো নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অফিস সহায়ক পদে সভাপতির নিজের ভাতিজাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
সরেজমিন স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে অফিস সহায়ক পদে প্রতিষ্ঠানের সভাপতির ভাতিজা রিমন ইসলামকে, অফিস সহকারী পদে মমিনুর ইসলাম, নিরাপত্তাকর্মী পদে আশিকুর রহমান ও আয়া পদে হাসি আক্তারকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়েছে এবং তার বিনিময়ে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা যায়।
নিয়োগ পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে এ বিষয়ে অধ্যক্ষের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। নিয়োগ পরীক্ষার আগে কারা নিয়োগ পাবে এটা বলা সম্ভব নয়। ওই নিয়োগের সব কার্যক্রম ডিজি প্রতিনিধির পরিচালনা করার কথা থাকলেও ডিজি প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
পরে স্থানীয়দের চাপে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ নিয়ে আসে ডিজি প্রতিনিধিকে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর পরই ফলাফল ঘোষণা না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ডিজি প্রতিনিধি সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক ও সদস্য সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াহিদ চলে যেতে চাইলে সংবাদকর্মীদের তোপের মুখে সেখানেই ফলাফল ঘোষণা করতে বাধ্য হন। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় স্থানীয়রা সভাপতির ভাতিজাসহ যাদের নিয়োগ দেয়ার কথা স্থানীয়রা বলেছিল তাদেরই নিয়োগ দেয়া হয়।
সভাপতি ও অধ্যক্ষের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে গিয়ে স্থানীয় ও গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্যদের প্রতিবাদে এর আগে দুইবার নিয়োগ পরীক্ষা পণ্ড হয়ে যায়।
এ ছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে সৈয়দপুর আমলি আদালতে একটি মামলাও করেন ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির দুই অভিভাবক সদস্য। মামলাটি আমলে নিয়ে গত ১১ মে একতরফা শুনানি শেষে নিয়োগ বন্ধের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন আদালত।
গত ১৪ মে বিবাদী পক্ষের একতরফা শুনানিতে নিষেধাজ্ঞার আদেশটি ভ্যাকেট হয়। উভয় পক্ষের আপত্তি শুনানির জন্য ২৪ মে দিন ধার্য করা হলেও শুনানির আগের দিন অধ্যক্ষ ও সভাপতির যোগসাজশে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।’ নানা অভিযোগ ও আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এর আগেও দুইবার পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন কারণে তা বাতিল হয়ে গেছে।
এ জন্য আজকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করছি। আদালতে মামলা হয়েছে না কি হয়েছে সেটি আমি দেখব। আমিও আইন নিয়ে পড়েছি। আমার চেয়ে কেউ আইন ভালো বুঝে না।’
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি এরশাদ আলী লেবুর সাথে অভিযোগের কথা বলতে গেলে তার লোকজন বাধা দেয় সংবাদকর্মীদের। নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে ডিজি প্রতিনিধি সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানালে মুঠোফোনে জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মামলার নিষেধাজ্ঞার আদেশ ভ্যাকেট হলেও শুনানির আগে নিয়োগের আদেশ দেয়া না হলেও যদি নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। তাহলে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবে। এ ছাড়াও বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’
টিএইচ